"ওরা" কারা ?
ঘড়িতে সময় ৫.২৫ , ১১ অক্টোবর , সোমবার।
>> ধূসর কুয়াশাচ্ছন্ন রুক্ষ রাস্তায় আমি হাঁটছি । এক হাত সামনের রাস্তা টুকুও দেখা যাচ্ছে না । আমি মাস্ক পরে হাটছি ।
>> না আমি কোন শীত কালের কথা বলছি না ।
>> আমি বলছি কোন এক জন-মানবহীন শূন্য পৃথিবীর কথা ।
যেখানে ধূসর কুয়াশাগুলো কোন শীতের জন্য তৈরি হয়নি, হয়েছে আমাদের মাত্রাতিরিক্ত দূষণ এর ফলে ।
>> বিজ্ঞানীরা আনুমান ঠিক ই করতে পেরেছিলেন । কিন্তু বড্ড দেরী হয়ে গেছে । তাদের নিজেদের ও শেষ রক্ষা হয় নি ।কেউ পালাতে পারে নি তাদের কথিত ভীন গ্রহে। নাসার চন্দ্রাভিযান , মঙ্গলাভিযান সবই মিথ্যে ছিল ।
>> সবাই একে একে চলে গেছে কিন্তু আমাকে বাচিয়ে রেখেছে "ওরা" ।
>> সদ্য মৃত রাস্তার পাশের লাশ গুলো পচে বীভৎস আকার ধারণ করেছে ।
ওরাই আমাকে এই স্পেশাল মাস্ক টি দিয়ে গেছে । যার জন্য আজও আমি বেচে আছি । তবে মাস্কটিকে না খোলার জন্য জোর তাগিদ দেওয়া হয়েছে ।
>> অনুমান করে হাটছি , পারিচিত রাস্তা টাও আজ খুব অপরিচিত মনে হচ্ছে । ওরা নিষেধ করার পর থেকে আর টানেল থেকে বের হতাম না কিন্তু খাবার ও প্রায় শেষ হয়ে এসেছে ।
>> সামনের গাড়ি টা তে একটা সদ্য মৃত লাশ , গাড়ি ও লাশের গায়ে থেকে তেল চুপসে পরছে । গাড়ির সামনের বক্স টা চেক করলাম কোন খাবার পেলাম না , একটা জলের বোতল । ব্যাগে ঢুকিয়ে নিলাম । একটা ছোট বার্থডে উইশ কার্ড পেলাম । মনে পড়ল আজ লরেঞ্জ এর জন্ম দিন । ব্যাগে ভরে এবার হাটা শুরু করলাম রেল লাইন ধরে । হাটার আর ক্ষমতা নেই । পা গুলো বেকে যাচ্ছে ।
>> টানেলে পৌছে আগুন জ্বালিয়ে বসে আছি । একা একা ভাবছি আর কতদিন বাচব ? এই ভূতুড়ে পরিবেশে ও খুব বাচতে ইচ্ছে করছে । বার্থডে উইশ কার্ডটা বের করে লরেঞ্জ এর কথা চিন্তা করছি , চিন্তা করতে করতে ঘুমিয়ে পরেছি কখন যেন ।
>> সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে আবারো খাবার এর জন্য হাটা শুরু করলাম । বায়ু মণ্ডল এতটাই দূষিত হয়েছে যে সূর্যের আলো ও ঠিক মত এসে পৌছে না । হাটতে হাটতে রাস্তার পাশে একটা অবাক করার মত জিনিষ দেখলাম । একটা ফুল , কিভাবে বেচে আছে এটা ? এই নিষ্ঠুর পরিবেশে । থাক এটা হয়ত এটাই আবার সবুজ পৃথিবী তৈরি করবে ।
>> আবারো হাটছি কিন্তু শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে প্রচন্ড ফিল্টার টা আর বাতাস ছাঁকতে পারছে না । সেই সাথে হাটার ক্ষমতা ও হারিয়ে যাচ্ছে । ক্ষুধায় খুড়িয়ে খুড়িয়ে হাটছি ।
>> সামনে ট্রেন লাইনের উপরে একটি ট্রেন । ট্রেনে খাবার খুজতে খুজতে একটা ফিল্টার পেলাম সাথে সাথেই পুরোনা টা খুলে নতুন টা লাগালাম ।
>> হুম ! এখন একটু শ্বাস নিতে আরাম হচ্ছে । আবারো হাটতে লাগলাম ।
>> শুন্য রাস্তা আর শুন্য দালান কোঠা ছাড়া আর কিছুই নেই । প্রচন্ড বেগে বাতাস বইতেছে ।
একটা কাশিতে ফিল্টার টা ছিটকে পরে গেল । তুলে নেওয়ার সময় এক বিকট শব্দে ভয় পেয়ে পেছনে তাকালাম কিন্তু কিছু নেই । আবার দৌড়ে তুলতে যাওয়ার সময় একটা লাশে পা আটকে রাস্তায় পরে গেলাম । ফিল্টার টা হাতের ধাক্কায় কোথায় যেন ছিটকে গেছে । নাহ ! আর শ্বাস নিতে পারছি না । হৃৎপিণ্ড টা ফেটে যাচ্ছে । বিষাক্ত বাতাস আমার মস্তিষ্ক চিড়ে যন্ত্রনা দিচ্ছে । চোখে আর কিছু দেখতে পাচ্ছি না চোখ দুটো যাপসা হয়ে গেল । উবে থাকা প্রাণ টাও বের হয়ে গেল । দমকা হাওয়ায় লরেঞ্জ এর ছবিটা হাত থেকে ওড়ে গেল । রাস্তায় পরে রইল আমার নিথর দেহ টা । এভাবেই শেষ হয়ে গেল পৃথিবীর শেষ মানুষ টা ।
>> শুধু থেকে গেল "ওরা" ।
পোস্ট টি লিখতে সময় লেগেছে ৩ ঘণ্টা ৩০ মিনিট
সবার কাছে প্রশ্ন "ওরা" কারা ?
পারলে কমেন্ট করো না পারলে জানিয়ে দেওয়া হবে ।



No comments